সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ২০২৬: মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতির বদলে লটারি প্রক্রিয়া বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীন বিদ্যালয়গুলোর জন্য এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এর অর্থ হলো, আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০২৬) জন্যও প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির প্রক্রিয়া হবে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ২০২৬
এই সিদ্ধান্তটি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেশের লক্ষ লক্ষ অভিভাবককে তাদের সন্তানের ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে উৎসাহিত করবে। একসময় কেবল প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি হলেও, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব শ্রেণিতেই এই পদ্ধতি চালু হয় এবং তারপর থেকে তা আর পরিবর্তিত হয়নি।
চলুন, মাউশি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই ভর্তি প্রক্রিয়ার সময়সূচি, প্রযোজ্যতা এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
১. লটারি প্রক্রিয়ার প্রযোজ্যতা: কাদের জন্য কার্যকর?
মাউশির এই সিদ্ধান্ত দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য একরকম নয়। সুনির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলের বিদ্যালয়েই এই পদ্ধতি কার্যকর হবে:
- ক. সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়: দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হবে।
- খ. বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়:
- মহানগর এলাকায় অবস্থিত সব বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
- জেলা সদর উপজেলায় অবস্থিত সব বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
- অন্যান্য উপজেলার সদরে অবস্থিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
মূল কথা: এই সিদ্ধান্তটি দেশের শহরাঞ্চল এবং সদর উপজেলাগুলোতে অবস্থিত বেশিরভাগ জনপ্রিয় স্কুলকে সরাসরি লটারি প্রক্রিয়ার অধীনে আনবে।
২. ভর্তি আবেদন ও লটারির সময়সূচি (২০২৬ শিক্ষাবর্ষ)
শিক্ষার্থী ভর্তির পুরো প্রক্রিয়াটি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের সহায়তায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে।
| কার্যক্রম | শুরু ও শেষের তারিখ | সময়সীমা |
| প্রধান শিক্ষকদের রেজিস্ট্রেশন ও শূন্যপদ আপলোড | ১২ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর | বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাজ |
| অনলাইনে শিক্ষার্থীদের আবেদন শুরু | ২১ নভেম্বর | সকাল থেকে |
| অনলাইনে আবেদন শেষ | ৫ ডিসেম্বর | শেষ সময় পর্যন্ত |
| লটারি অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ | ১৪ ডিসেম্বর | মোবাইল অপারেটর টেলিটকের সহায়তায় |
| ক্লাস শুরু | জানুয়ারি ২০২৬ | ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে |
৩. লটারির মাধ্যম: টেলিটকের ডিজিটাল পদ্ধতি
ভর্তি প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখতে প্রতিবারের মতো এবারও ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে।
- স্বচ্ছতা: এই পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় এখানে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকে না, যা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
- সহায়তা: সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি কারিগরি সহায়তা দেবে মোবাইল অপারেটর টেলিটক। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ থেকে শুরু করে লটারির ফল প্রকাশ পর্যন্ত সব ধাপেই তারা সহায়তা করবে।
- শিক্ষকের কাজ: লটারির মূল প্রক্রিয়া শুরুর আগেই প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১২ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে যেন তারা তাদের বিদ্যালয়ের শূন্যপদের তথ্য সঠিকভাবে সফটওয়্যারে আপলোড করতে পারেন।
৪. লটারি পদ্ধতির মনস্তাত্ত্বিক ও শিক্ষাগত প্রভাব
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এই পদ্ধতি শুরু হলেও, এর ধারাবাহিকতা অনেক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ক. লটারি পদ্ধতির সুবিধা
- কোচিং বাণিজ্য বন্ধ: পরীক্ষা না থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য তৈরি হওয়া কোচিং বাণিজ্য অনেকটা বন্ধ হয়েছে।
- সুযোগের সমতা: ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীই মেধা যাচাইয়ের প্রাথমিক বাধা ছাড়াই ভর্তির সমান সুযোগ পাচ্ছে।
খ. লটারি পদ্ধতির চ্যালেঞ্জ
- মেধার মূল্যায়ন: সমালোচকদের মতে, লটারিতে ভর্তির কারণে শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না।
- প্রস্তুতিতে ভাটা: অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ভর্তির জন্য যে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার প্রবণতা ছিল, তাতে ভাটা পড়েছে।
৫. অভিভাবকদের করণীয়: এখনই প্রস্তুতি নিন
যেহেতু লটারি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে, অভিভাবকদের কয়েকটি বিষয়ে এখনই মনোযোগ দেওয়া জরুরি:
- বিদ্যালয় নির্বাচন: আপনার পছন্দের বিদ্যালয়গুলোর তালিকা প্রস্তুত করুন। একাধিক বিদ্যালয়ে আবেদন করার সুযোগ থাকলে তা কাজে লাগান।
- অনলাইন আবেদন: ২১ নভেম্বর আবেদন শুরু হলে দ্রুততম সময়ে নির্ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করুন। আবেদন ফরমে কোনো ভুল থাকলে তা লটারির সময় জটিলতা তৈরি করতে পারে।
- নিয়মাবলী অনুসরণ: প্রতিটি বিদ্যালয়ের নিজস্ব কিছু নিয়মাবলী বা কোটা থাকতে পারে। আবেদনের আগে বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ড বা ওয়েবসাইটে তা দেখে নিন।
মাউশির অধীন দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক এবং বেশিরভাগ বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত একটি চূড়ান্ত বিষয়। এই সিদ্ধান্তে খুশি বা অখুশি হওয়ার সুযোগ নেই, বরং এই পদ্ধতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে প্রক্রিয়াটি দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ২১ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অভিভাবকদের এখন ১৪ ডিসেম্বরের লটারি অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন ১: আমি কি একাধিক সরকারি বা বেসরকারি বিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবো? উত্তর: হ্যাঁ, সাধারণত শিক্ষার্থীরা টেলিটকের মাধ্যমে একাধিক বিদ্যালয়ের জন্য আবেদন করতে পারে। তবে আবেদনের সময়সীমা (২১ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর) এবং মাউশির চূড়ান্ত নির্দেশনা দেখে নিশ্চিত হতে হবে।
প্রশ্ন ২: লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া কি শুধু প্রথম শ্রেণির জন্য প্রযোজ্য? উত্তর: না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হওয়া এই পদ্ধতি এখনো বহাল আছে। তাই ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্যও প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
প্রশ্ন ৩: ভর্তির লটারির রেজাল্ট কোথায় প্রকাশ করা হবে? উত্তর: লটারির ফল সাধারণত মাউশির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট/নোটিশ বোর্ড এবং টেলিটকের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন ৪: প্রধান শিক্ষকেরা কেন ১২ থেকে ১৯ নভেম্বর রেজিস্ট্রেশন করছেন? উত্তর: প্রধান শিক্ষকেরা এই সময়ের মধ্যে তাদের বিদ্যালয়ে কোন শ্রেণিতে কতটি আসন শূন্য আছে, সেই তথ্যগুলো অনলাইন সফটওয়্যারে আপলোড করবেন, যাতে লটারি প্রক্রিয়ার জন্য সঠিক ডেটা প্রস্তুত থাকে।
প্রশ্ন ৫: কোনো বেসরকারি স্কুল যদি লটারির মাধ্যমে ভর্তি না নিতে চায়, তবে কী হবে? উত্তর: এই সিদ্ধান্ত মাউশির অধীন বিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রযোজ্য। মহানগর ও জেলা সদর উপজেলার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকেও এই নিয়ম মানতে হবে। নিয়ম অমান্য করলে কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারে।
আপনার সন্তানের ভর্তির জন্য আপনি কোন বিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করার পরিকল্পনা করছেন? আবেদন প্রক্রিয়ার কোনো নির্দিষ্ট অংশে আপনার সহায়তার প্রয়োজন হলে কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন।




2 thoughts on “সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ২০২৬: আবেদন শুরু ২১ নভেম্বর, লটারি ১৪ ডিসেম্বর”