আলো ঘর টেক ডেস্ক: দেশের প্রযুক্তি বাজারে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি বড় সুখবর এসেছে। জনপ্রিয় চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অনার (Honor) আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে অনার স্মার্টফোন উৎপাদন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। এই লক্ষ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি পণ্য পরিবেশক স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডের সঙ্গে একটি কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশে অনার স্মার্টফোন উৎপাদন

আজ রোববার (২০ নভেম্বর) অনার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে (Kaliakoir Hi-Tech Park) অনারের অত্যাধুনিক কারখানা স্থাপন করা হবে। এর ফলে দেশের বাজারে খুব শীঘ্রই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ (Made in Bangladesh) ট্যাগযুক্ত অনার স্মার্টফোন পাওয়া যাবে, যা গ্রাহকদের জন্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও সাশ্রয়ী দাম নিশ্চিত করবে।

কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগের মূল তথ্য

• উদ্যোগ: স্থানীয়ভাবে অনার স্মার্টফোন উৎপাদন (Local Manufacturing)।
• অংশীদার: স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেড (Smart Technologies BD)।
• কারখানার অবস্থান: কালিয়াকৈর স্মার্ট হাইটেক পার্ক, গাজীপুর।
• মূল লক্ষ্য: প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, এআই উদ্ভাবন এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ফোন বাজারজাতকরণ।
• প্রভাব: স্থানীয় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও স্মার্টফোনের দাম কমার সম্ভাবনা।

বাংলাদেশে অনার স্মার্টফোন উৎপাদন ও স্মার্ট টেকনোলজিসের চুক্তি

বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল। এই সম্ভাবনাময় বাজারকে গুরুত্ব দিয়ে অনার তাদের বৈশ্বিক এআই উদ্ভাবন (Global AI Innovation) ও প্রযুক্তি স্থানীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ঐতিহাসিক চুক্তিপত্রে সই করেন অনারের সাউথ ইস্ট এশিয়ার প্রেসিডেন্ট জর্জ ঝাও (George Zhao) এবং স্মার্ট টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম।

প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এই দুই প্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্ব দেশের প্রযুক্তি খাতে (Tech Sector) এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। কারখানাটি কালিয়াকৈরের স্মার্ট হাইটেক পার্কে স্থাপন করা হবে, যা সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই উদ্যোগটি সফল হলে বাংলাদেশে অনার স্মার্টফোন উৎপাদন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

আরও পড়ুন: ফ্রিল্যান্সিং এবং AI: সেরা ৫টি হাই-ডিমান্ড স্কিল (A-Z গাইড)

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ অনার ফোন: ক্রেতাদের জন্য কী সুবিধা?

ভোক্তাদের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগছে, বাংলাদেশে অনার স্মার্টফোন উৎপাদন শুরু হলে তারা কী সুবিধা পাবেন? যখন একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড স্থানীয়ভাবে কারখানা স্থাপন করে, তখন তার সরাসরি প্রভাব পড়ে পণ্যের দামে এবং সেবার মানে।

1. দামের সাশ্রয় (Cost Effective): স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হলে আমদানি শুল্ক (Import Duty) কমে যায়। ফলে Honor mobile price in Bangladesh বা অনার ফোনের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
2. দ্রুত সেবা: যন্ত্রাংশ দেশেই থাকায় বিক্রয় পরবর্তী সেবা (After Sales Service) আরও দ্রুত ও সহজ হবে। ওয়ারেন্টি ক্লেইম করা বা পার্টস পরিবর্তন করা ঝামেলামুক্ত হবে।
3. আধুনিক প্রযুক্তি: অনার তাদের ‘আলফা প্ল্যান’-এর মাধ্যমে বৈশ্বিক মানের প্রযুক্তি ও এআই ফিচারগুলো এখন দেশীয় ফোনেই প্রদান করবে।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রায় নতুন ধাপ

এই অংশীদারত্ব নিয়ে অনারের সাউথ ইস্ট এশিয়ার প্রেসিডেন্ট জর্জ ঝাও বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও দ্রুতবর্ধনশীল। এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে যন্ত্র উৎপাদন করে আমরা অনারের বৈশ্বিক এআই উদ্ভাবনকে বাংলাদেশের আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’

অন্যদিকে, স্মার্ট টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে অনারের লক্ষ্যপূরণের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। এই উৎপাদন–সুবিধা (Production Facility) নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে, স্থানীয় সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রায় অবদান রাখবে।’ তিনি আরও জানান, এই চুক্তির মাধ্যমে তারা দেশেই বিশ্বমানের পণ্য তৈরির অপেক্ষায় রয়েছেন।

আরও পড়ুন: এআই টুলস এবং Gemini: অফিসের কাজ ১০ গুণ দ্রুত করার সেরা ৫টি কৌশল

বাংলাদেশে অনারের যাত্রা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে অনার। এর পর থেকেই প্রিমিয়াম ডিজাইন এবং শক্তিশালী পারফরম্যান্সের কারণে অনার দেশের অন্যতম জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। অনার বাংলাদেশ-এর বৈশ্বিক লক্ষ্য হলো—অনার আলফা প্ল্যান (Honor Alpha Plan)-এর মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং ক্রেতাকেন্দ্রিক উদ্ভাবন নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে নতুন এ কারখানা স্থাপন অনারের সেই প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।

এই কারখানা স্থাপনের ফলে দেশে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান এবং অ্যাসেম্বলি লাইনে কাজের সুযোগ তৈরি হবে। এ সংক্রান্ত কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এলে আমরা চাকরির বিজ্ঞপ্তি বিভাগে জানিয়ে দেব।