মেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা ২০২৬: বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষার মান এবং সাশ্রয়ী খরচের কারণে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে এ দেশ একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী এখানকার সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য আবেদন করেন। এই চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসন পুনর্বিন্যাস করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর (DGME)।

মেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা ২০২৬

সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ২২৪টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এমবিবিএস (MBBS) কোর্সের জন্য ১৮৪টি এবং বিডিএস (BDS) বা ডেন্টাল কোর্সের জন্য ৪০টি আসন নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষায় অংশগ্রহণের নতুন সুযোগ তৈরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আলো ঘর-এর শিক্ষা ডেস্ক থেকে আজকের প্রতিবেদনে আমরা বিদেশি কোটার এই আসন বিন্যাস এবং ভর্তির নিয়মাবলি বিস্তারিত আলোচনা করব।

মেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা ২০২৬: সার্ক ও নন-সার্ক কোটা বিভাজন

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে সার্ক (SAARC) এবং নন-সার্ক (Non-SAARC) দেশগুলোর জন্য আলাদা নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। মোট ২২৪টি আসনের মধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য ১২৫টি এবং নন-সার্ক বা অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ৯৯টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, সার্ক ও নন-সার্ক কোটা সম্পূর্ণ আলাদা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, নন-সার্ক কোটায় সংরক্ষিত আসনে কোনোভাবেই সার্ক দেশের শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে না। এটি ভর্তির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং সমতা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। MBBS admission for foreign students in Bangladesh এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সুশৃঙ্খল।

সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য আসন বিন্যাস

সার্কভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে মোট ১২৫টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের শিক্ষার্থীদের জন্য এমবিবিএসে ২২টি এবং বিডিএসে ২টি আসন রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের জন্য এমবিবিএসে ২১টি এবং বিডিএসে ২টি আসন বরাদ্দ রয়েছে।

নেপালের শিক্ষার্থীদের জন্য এমবিবিএসে ১৯টি ও বিডিএসে ৩টি, শ্রীলঙ্কার জন্য এমবিবিএসে ১৩টি ও বিডিএসে ২টি, ভুটানের জন্য এমবিবিএসে ৩টি ও বিডিএসে ১টি আসন নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মালদ্বীপের জন্য এমবিবিএসে ৬টি ও বিডিএসে ১টি এবং আফগানিস্তানের জন্য এমবিবিএসে ৩টি ও বিডিএসে ১টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে সার্ক দেশের জন্য এমবিবিএসে মোট ১১২টি এবং বিডিএসে ১৩টি আসন রয়েছে।

আরও পড়ুন: বুয়েট ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ২০২৫-২৬: আবেদন যোগ্যতা, পরীক্ষার প্রস্তুতি ও নতুন নিয়ম (A-Z গাইড)

নন-সার্ক দেশগুলোর জন্য আসন বিন্যাস ও সুযোগ

নন-সার্ক দেশগুলোর আসন বণ্টনেও বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। সার্ক দেশের মতো একই বৃত্তির আওতায় মিয়ানমারের শিক্ষার্থীদের জন্য এমবিবিএসে ৫টি এবং বিডিএসে ২টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোটায় এমবিবিএসে ১৮টি এবং বিডিএসে ৩টি আসন রাখা হয়েছে।

এছাড়া অন্যান্য সব দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্তভাবে এমবিবিএসে ৪৯টি এবং বিডিএসে ২২টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। সব মিলিয়ে নন-সার্ক দেশগুলোর জন্য এমবিবিএসে ৭২টি এবং বিডিএসে ২৭টি, অর্থাৎ মোট ৯৯টি আসন রাখা হয়েছে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও পরিচিত করবে। ভর্তিচ্ছুরা আমাদের শিক্ষা সংবাদ বিভাগ থেকে নিয়মিত আপডেট পেতে পারেন।

ভর্তি প্রক্রিয়ার গুরুত্ব ও প্রভাব

মেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা ২০২৬-এর এই আসন পুনর্বিন্যাস বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতের জন্য ইতিবাচক। বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আনে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করে। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার মান এবং ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের সুযোগ বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার মূল কারণ।

যারা দেশের বাইরে থেকে এসে বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়তে চান, তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। সঠিক সময়ে আবেদন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট এবং সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়ার বিস্তারিত জানা যাবে।

আরও পড়ুন: মেডিকেল অফিসার ও নার্সিং ক্যারিয়ার গাইড: নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সুযোগ

বিদেশি শিক্ষার্থীদের করণীয় ও প্রত্যাশা

আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে, তবে সুযোগও তৈরি হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের উচিত এখন থেকেই তাদের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং অন্যান্য নথিপত্র প্রস্তুত রাখা। government medical college seat plan 2026 সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর আশা করছে, এই নতুন বিন্যাসের মাধ্যমে যোগ্য এবং মেধাবী বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন। এটি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সম্পর্ক আরও জোরদার করবে। ভর্তির সর্বশেষ খবর জানতে আলো ঘর-এর সাথেই থাকুন।

আকাশ মাহমুদ, শিক্ষা বিভাগীয় প্রধান: [আলো ঘর]-এর শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি গত ৫ বছর ধরে শিক্ষা বোর্ড, ভর্তি পরীক্ষা এবং শিক্ষানীতি নিয়ে গভীর বিশ্লেষণধর্মী সংবাদ পরিবেশন করে আসছেন।

“বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এই আসন বৃদ্ধিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? আপনার মতামত নিচে কমেন্ট করে জানান।”

আরও পড়ুন: কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২০২৫-২৬: আবেদন শুরু ২৫ নভেম্বর, জানুন পরীক্ষার তারিখ ও বিস্তারিত